Welcome to Discover Tripura

Article in detail

23-April-2020
করোনা: শুধু ডাক্তারবাবুরা বলুন না
Manas Biswas

March 13, 2020

একেই বলে, অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট! অথবা, একে মনসা, তায় ধুনোর গন্ধ! গোটা দুনিয়া করোনা-য় কাবু। যত না সংক্রমণে, তার চেয়েও বেশি "হতে পারে"-র আতঙ্কে। আর এই সুযোগেই উদ্বেগের রামধনু, এই দেশের আকাশে। কখনও সেই উদ্বেগের প্রকাশ গানে, তো কখনও কবিতায়। কখনও বিবৃতিতে, কখনও আবার পরামর্শে। এবং পরামর্শ আর নির্দেশিকার একচ্ছত্র অধিপতি যাঁরা, তাঁদের মধ্যে তো যাকে বলে রেষারেষি চলছে, কে কত লেটেস্ট পরামর্শ, বা নির্দেশ দিতে পারে।



আর লেটেস্ট বলে লেটেস্ট? কতদূর থেকে কথা বলতে হবে--- ৫ ফুট? রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলার সময়, পেছন থেকে কেউ ধাক্কা মারলে, দুরত্বটা যদি সাড়ে চার ফুট হয়ে যায় তখন? ভাবতেও গা শিউড়ে উঠছে। হাঁচি পেলে, কীভাবে হাঁচবেন? হাতটা উপুড় করে নাকের সামনে ধরে? নাকি হাতের চেটোটা বাইরের দিকে রেখে, নাকের সামনে ধরবেন? এর মধ্যে আবার নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে, মাস্ক নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনার পক্ষে সবচেয়ে ভাল মাস্ক হল--- এন-৯৫। তা এদেশে, বা আরও মাইক্রোস্কোপিক মানচিত্র অনুযায়ী, এ বঙ্গে, নামী গবেষণাগারে তৈরি এই এন-৯৫ মাস্কের দাম কত, সেটা ক'জন বঙ্গবাসী জানেন, তা নিয়েই সপ্তাহখানেক আলোচনা চলতে পারে। তারপর দেখাশোনা ফ্রি। এবং তারও পরে, কেনাকাটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। অতশত ঝামেলায় এ বঙ্গের কাজ কী? আমাদের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের রাজ্যে তাই, হোম-মেড মাস্ক যুগ যুগ জিও। সস্তায় বস্তা বস্তা। মুখে লাগান, আর বেরিয়ে পড়ুন।



কে বা কারা যেন আবার রটিয়ে দিয়েছে, এই মাস্কটা খুব একটা জুতসই নয়। তা সেটা মোটামুটি চাউর হওয়ার আগেই, আসরে নেমে পড়লেন, রাজ্যের এক বিরোধী নেতা। তার আবার পরামর্শ, আগে চিন থেকে মাস্ক আসত। কিন্তু ওখানে যা অবস্থা, কেউ আর মোড ইন চায়না মাস্ক নিতে চাইছে না। ফলে ওরাই এখন ভারতে মাস্কের বরাত দিয়েছে। তাই আমরা যেন বাড়িতে পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো দিয়ে মাস্ক তৈরি করে নিই। অর্থাৎ এ দেশের নামী সংস্থার গবেষণাগারে তৈরি দামী মাস্ক, আপাতত সাগরপাড়ি দিচ্ছে। আমাদের হাতে পড়ে রইল, গরিবের মেড ইন বেঙ্গল।



এখানেই শেষ নয়। করোনা নিয়ে মিম তো সোশাল মিডিয়ায় ছেয়ে ফেলেছে। কোথাও তার বিষয়, করোনা নিয়ে অফিসে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সবেতন ছুটি চেয়ে হুমকি। তো কোথাও আবার, সেই ছুটির পরিবর্তে, ইয়েস ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে বেতন জমা দেওয়ার পাল্টা চাপ। সেলসম্যান থেকে, রাস্তার ইভটিজার, করোনা-কৌতুকের আওতায়, আপাতত গেরস্থ বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের, তামাম বিষয়।



তবে সবচেয়ে বড় কৌতুকটা তৈরি হয়েছে, অন্য জায়গায়। করোনা আতঙ্কে নাকি বিলিতি করমর্দনের জায়গা দখল করেছে, ভারতীয় নমস্কার। কথার কথা নয়। সোশাল মিডিয়ায় রীতিমতো ছবি ছড়িয়েছে একদল। যেখানে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও বরদকর, হাত জোর করে, পরস্পরের প্রতি কুশল বিনিময় করছেন। বোঝ কাণ্ড!



আর এই সবকিছুর ধাক্কায়, যাঁদের এই নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার কথা, সেই চিকিৎসকরাই আপাতত ব্যাকবেঞ্চার। যতটুকু যা পাওয়া যাচ্ছে, সেটাও একেবারেই, বলিয়ে নেওয়া বিবৃতি। কখনও তা বলিয়ে নিচ্ছে, সংবাদমাধ্যম। কখনও আবার রাজনীতির ক্ষমতাসীন প্রভুকূল। যদিও দিনের শেষে, সরকারি ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে থাকা, সমাজের নিয়ন্তারা বিধিসম্মত সতর্কীকরণের ঢঙে বলছেন, করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এত দফায় দফায় বৈঠক, আর নিত্যনতুন গুরুগম্ভীর নির্দেশিকার দরকার কী? শুনলে না হয় ডাক্তারবাবুদের কাছ থেকেই শুনি! আর কিছু না হোক, বিভ্রান্তির বহর তো তাতে, কিছু কমতে পারে!

© Copyright 2017 discovertripura.com - All Rights Reserved